ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ আলমগীর ফরিদের সদস্য পদ স্থগিত, ভাইস চেয়ারম্যান ও একটি পদে জেলায় ৩ জন

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করে কেন্দ্রিয় সদস্য হিসাবে ঘোষণা করার পর পুনরায় স্থগিত করায় আবারো ভিন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদ রাজনীতিতে পুরোদমে সক্রিয় হচ্ছেন এমন আশা নিয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ জেলার একটি অংশ প্রতিক্ষায় থাকলেও কেন্দ্রিয় কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে তার যবনিকা ঘটেছে। এরই মধ্যদিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সাবেক সাংসদ ও সাবেক কেন্দ্রিয় নেতা আলমগীর ফরিদের ফিরে আসা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।  তবে এতে বিএনপি লাভবান হয়নি এমন কথা বলেছেন বিএনপির অনেক নেতা। অপরদিকে গতকাল ঘোষিত কমিটিতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে স্থান পেয়েছেন সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন মেজর জেনারেল(অবঃ) রুহুল আলম চৌধুরী এবং একটি সম্পাদকীয় পদ পেয়েছেন কক্সবাজার সদর আসনের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল।
এতদিন বিভিন্ন উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে আলমগীর ফরিদের অনুসারীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও এখন আলমগীর ফরিদকে দমাতে সদস্য পদ স্থগিত করেছে। বর্তমানে প্রেরিত তালিকা থেকে আলমগীর ফরিদের নাম মুচে দেওয়া হয়েছে।
বড়মহেশখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম জানিয়েছেন, যাদের কেউ পছন্দ করে না এমন লোকজন দিয়েই উপজেলা থেকে শুরু করে সবকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আলমগীর ফরিদকে কেন্দ্রিয় কমিটি না রাখলেও তিনি বিএনপি ছেড়ে যাবেন না। শহীদ জিয়ার আদর্শে লালন করে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে কাজ করবেন তিনি। এতে বিএনপি কতটুকু লাভবান হয়েছে তা সময়ে বলে দেবে।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাবেক এক শীর্ষনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, শুধু আলমগীর ফরিদের উত্থান ঠেকাতে কক্সবাজার বিএনপির শীর্ষনেতারা একাট্টা ছিল। আলমগীর ফরিদের নেতৃত্বেই মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বিএনপিতে জোয়ার শুরু হয়েছিল। তার এমন উত্থান সহ্য হয়নি বিএনপির কয়েকজন নেতার। তারা যেভাবেই হউক তাকে ঠেকিয়েছেন। আলমগীর ফরিদের সমর্থন না থাকায় গত ইউপি নির্বাচনে মহেশখালীতে বিএনপি প্রার্থীও দিতে পারেনি। পৌরসভার মেয়র পদে একজন গাড়ির লাইনম্যানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কেন এমনটি হয়েছে তা সকলেরই জানা। এ ছাড়া মহেশখালীতে বিএনপি শক্তিশালী সংগঠন হলেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী পায়নি। এমন জনবিচ্ছিন্নরাই আলমগীর ফরিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ওই ষড়যন্ত্রকারীদের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই তা নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নবাগত সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ চকরিয়া-পেকুয়া থেকে ও মহেশখালী-কুতুবদিয়া থেকে দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হন আলমগীর ফরিদ। সালাহউদ্দিন আহমদ যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে এই দুই সাংসদের মধ্যে শুরু হয় কোন্দল ও রেসারেশি। এরপরই হয় জেলা বিএনপির সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে কক্সবাজার বিএনপি। এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন শাহজাহান চৌধুরী ও শামীম আরা স্বপ্না অপরপক্ষে নেতৃত্ব দেন লুৎফুর রহমান কাজল ও আলমগীর ফরিদ। পরবর্তিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলমগীর ফরিদকে বহিস্কার করলে তা আর প্রত্যাহার হয়নি।
জানা যায় গত কয়েক বছর ধরেই চলছে আলমগীর ফরিদকে বিএনপি থেকে বিদায় দেওয়ার ষড়যন্ত্র। বিগত সময়ে ঘোষিত মহেশখালীর কমিটিতে স্থান পায়নি বিএনপির ত্যাগী নেতা হিসাবে খ্যাত আলমগীর ফরিদের অনুসারী হোয়ানকের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের সিকদার, এডভোকেট হামিদুল হক। এ ছাড়াও আলমগীর ফরিদকে সমর্থন করেন এমন অনেক বিএনপি নেতাকে অসম্মানজনক পদ দিয়ে  হেনস্তা করা হযেছে।
এদিকে গতকাল ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটিতে সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদ এর সদস্য পদ স্থগিত হওয়ায় বিস্মিত হননি মহেশখালী বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুবক্কর ছিদ্দিক,তিনি বলেছেন বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীরা কমিটিতে পদ পায়নি। আলমগীর ফরিদও দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাই তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। তার বিএনপিতে ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই। যারা আলমগীর ফরিদের বিএনপি করে তাদের বিএনপির পদ পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদ ঘোষিত কমিটির ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে নারাজ।

পাঠকের মতামত: